প্রতিষ্ঠান ভাঙতে থাকলে খোঁজ পড়ে 'নায়ক'-এর রাজনীতি যখন কাহিনি আর কল্পনাকে হাতিয়ার বানায়, তখন নাগরিক বুদ্ধিমত্তাই হয়ে উঠতে পারে ভারসাম্য রক্ষার ভাষা। লিখছেন স্বর্ণদীপ হোমরায় এখন এক লাইনের~~~ তাঁরা নিজেদের প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হিসেবে তুলে ধরেন, কখনও দলবাজির ঊর্ধ্বে, কখনও জনতার একমাত্র প্রতিনিধি-রূপে।এই জনপ্রিয় রাজনৈতিক চরিত্রটির নাম 'পলিটিক্যাল আউটসাইডার'— যিনি বাইরে থেকে এসে ভিতরের ক্ষমতা দখল করেন। মানুষ এই ধরনের নেতার দিকে তখনই ঝোঁকে, যখন তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা হারায়। সেই সময়ে প্রয়োজন হয় এমন একজনকে, যিনি সিস্টেমের বাইরে থেকেও তার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এই মনোভাবের উৎস খুঁজতে গেলে যেতে হয় গল্প বলার আদি যুগে। মানুষ সম্ভবত একমাত্র প্রাণী, যারা গল্প বলে ও শোনে। আর সেই গল্পে, আদি কাল থেকে, একজন বর্ণময় নায়ক ছিলেন— যিনি সাধারণ নন, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী, নৈতিক ভারসাম্যের প্রতীক। নব্য প্রস্তর যুগে, জমির মালিকানা আর ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের সঙ্গে সঙ্গে এই নায়কের চেহারা বদলায়, গল্প বলা হয়ে ওঠে সংগঠিত। তখন থেকেই নির্ধারিত হয় কে গল্প বলবে, আর কে নায়ক হবে। আর সেই মুহূর্ত থেকেই নায়ককে কোনও একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে স্থানীয়করণ করা রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক হয়ে উঠল।নায়ক আসলে নিরাপত্তাহীনতার উত্তর। যখন প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ চায় এমন কাউকে, যে সিস্টেমের বাইরে থেকেও সব কিছু 'ঠিকঠাক' করে দিতে পারবে। সেই মানুষটা, গ্রিক উপাখ্যানের ওডিসিয়ুস, শার্লক হোমস বা ব্যোমকেশ বক্সী, কখনওই প্রশাসনিক কোনও পদে থাকেন না। তিনি সাধারণত একা, অস্থায়ী, কখনও অনিচ্ছুক, কিন্তু যখন প্রতিষ্ঠান মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন তিনিই এগিয়ে আসেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন, এবং এক ধরনের নৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনেন। আধুনিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই কাঠামোরই উত্তরাধিকার। যখন মানুষ রাষ্ট্র, সংবাদমাধ্যম বা কর্পোরেট শক্তির উপর আস্থা রাখতে পারছে না, বিশ্বজোড়া অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে মানুষ নির্ভরতা খুঁজছে, তখন তারা এমন কাউকে চাইছে, যিনি যেন এই ভাঙা কাঠামোর থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। এই মনোভাবকে আশ্রয় করেই উঠে আসছেন আপাত জনদরদি নায়কোচিত রাজনৈতিক নেতারা। আজকের রাজনৈতিক 'নায়ক'রা কথা দেন, তাঁরা সেই সব ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন, যেগুলো~~~ হবে। আর সেই মুহূর্ত থেকেই নায়ককে কোনও একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে স্থানীয়করণ করা রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক হয়ে উঠল।নায়ক আসলে নিরাপত্তাহীনতার উত্তর। যখন প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ চায় এমন কাউকে, যে সিস্টেমের বাইরে থেকেও সব কিছু 'ঠিকঠাক' করে দিতে পারবে। সেই মানুষটা, গ্রিক উপাখ্যানের ওডিসিয়ুস, শার্লক হোমস বা ব্যোমকেশ বক্সী, কখনওই প্রশাসনিক কোনও পদে থাকেন না। তিনি সাধারণত একা, অস্থায়ী, কখনও অনিচ্ছুক, কিন্তু যখন প্রতিষ্ঠান মুখ ফিরিয়ে নেয়, তখন তিনিই এগিয়ে আসেন, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন, এবং এক ধরনের নৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনেন। আধুনিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব এই কাঠামোরই উত্তরাধিকার। যখন মানুষ রাষ্ট্র, সংবাদমাধ্যম বা কর্পোরেট শক্তির উপর আস্থা রাখতে পারছে না, বিশ্বজোড়া অনিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে মানুষ নির্ভরতা খুঁজছে, তখন তারা এমন কাউকে চাইছে, যিনি যেন এই ভাঙা কাঠামোর থেকে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন। এই মনোভাবকে আশ্রয় করেই উঠে আসছেন আপাত জনদরদি নায়কোচিত রাজনৈতিক নেতারা। আজকের রাজনৈতিক 'নায়ক'রা কথা দেন, তাঁরা সেই সব ইস্যু নিয়ে কথা বলবেন, যেগুলো অন্যেরা এড়িয়ে চলেছে। অভিবাসন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ— এই সব প্রশ্নে তাঁরা এক সরল নৈতিক স্পষ্টতা নিয়ে আসার কথা বলেন।ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতির এই ইতিহাস নতুন নয়। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে ইতালিতে বা জার্মানিতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন আপাত জনদরদি নেতারা। তেমনই ১৯৭১-এর ভারতে নেত্রীই হয়ে উঠেছিলেন রাষ্ট্র। আজ যা বদলেছে, তা হলো মাধ্যম ও মাত্রা। আজকের নেতা নিজের নেতৃত্বের গল্প নিজেই বলেন— লাইভস্ট্রিমিংয়ে, টুইটে, মঞ্চে, নাটকীয় হাবভাবে। মানুষের কাছে কী ভাবে তথ্য পৌঁছবে, আগে তা ঠিক করত সম্পাদক, সাংবাদিক, বেতার বা সংবাদপত্রের মতো প্রতিষ্ঠান। এখন শাসকেরা সরাসরি জনতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন, কোনও ফিল্টার ছাড়াই। এখন একটা ছবিই যথেষ্ট, এক লাইনের পোস্টই হতে পারে রাজনৈতিক অবস্থান, আর একটা ভাইরাল ভিডিয়ো পার্লামেন্টের থেকে বেশি আলোড়ন তুলতে পারে। ব্রাজ়িলের বলসোনারো, হাঙ্গেরির অরবান-সহ বিশ্বের অনেক জনবাদী নেতাই চিত্রনির্ভর রাজনীতি গ্রহণ করেছেন।এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য ভাবে চোখে পড়ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে আর বিদেশনীতিতে। বিদেশনীতি একদা ছিল রাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা— নির্বাচনী গণতন্ত্রের ঊর্ধ্বে, আমলাতন্ত্রের চিন্তাশীল রূপরেখায় নির্ধারিত। ভাবমূর্তি-নির্ভর নেতারা ঘরোয়া ভোটারদের কাছে আমূল বদলের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু সেগুলো অনেক সময়েই প্রশাসনিক বাস্তবতার বাইরে। যখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির ময়দানে সেই প্রতিশ্রুতির যাচাই হয়, তখন দেখা যায়, তাঁরা প্রায়ই বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা